প্রতিবাদ। অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ সারা বিশ্বজুড়ে, নানা ভাষায় কিন্তু একই অর্থে। আত্মরক্ষায়, আত্ম-সম্মান রক্ষায়, সম্পত্তি রক্ষায়, যে কোন অন্যায় বা কোন সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী জুড়েই প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে চলছে প্রতিবাদ। এ কথা অনস্বীকার্য, কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদই হলো মানুষের একমাত্র হাতিয়ার। কিন্তু কোন কোন সময় প্রতিবাদের ধরনটা সঠিক হয় না। অনেক সময়ই দেখা যায় কোন দুর্ঘটনা বা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ কিছু মানুষ হিংসা ও আবেগ তাড়িত হয়ে পাল্টা এমন কিছু করে বসে, যাতে সেটা আবার একটা বড়োসড়ো অন্যায় হয়ে যায়। যেমন, কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মানুষ প্রায়ই বাড়ি, দোকান, অফিস, বাস, ট্রেন, চারচাকার গাড়ি অথবা দু’ চাকার মোটরসাইকেল অথবা স্কুটার ইত্যাদি ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়, রাস্তার মাঝখানে টায়ার জ্বালিয়ে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করে। কিন্তু এই প্রতিবাদের ধরন কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। কারণ কোন ব্যক্তির দোকান, গাড়ি বা মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হলে, যে অপরাধী তার কোন ক্ষতি আদৌ হয় না, অথচ জনগণের হাতে যে সমস্ত নিরীহ মানুষের সম্পত্তি নষ্ট হয় বা জ্বলে যায়, তাদের সত্যিই অনেক ক্ষতি হয়। আর সরকারি কোন অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া বা অফিসের সম্পত্তি নষ্ট করতে এবং সরকারি বাস বা ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হলে ক্ষতি হয় আমাদের সবার। কারণ ঐ বাস বা ট্রেন তৈরি হয় আমাদের দেওয়া করের টাকায়। ঐ সমস্ত সরকারি অফিস,ঐ অফিসের সমস্ত সম্পত্তি এবং ঐ সমস্ত সরকারি বাস বা ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ হয় আমাদের নিয়মিত ভাবে দেওয়া করের টাকায় এবং ঐ সমস্ত যানবাহন চলেও আমাদের টাকায় অর্থাৎ সরকারি বাস বা ট্রেনের চলাচলের জন্য যে জ্বালানীর প্রয়োজন হয় সেটাও কেনা হয় আমাদের দেওয়া টাকায় আর সেই সমস্ত সরকারি বাস বা ট্রেন গণপরিবহনের অংশ।
‘গণ’ বলতে বোঝায় আমরা। জনগণ। সুতরাং আমাদের অর্থে কেনা সাধারণের সম্পত্তি নষ্ট করি আমরা। এটা একটা দিকের ক্ষতি। অন্যদিকের ক্ষতিও কিন্তু মারাত্মক এবং তার ফল হয় সুদুরপ্রসারী। বাড়ী, গাড়ী, টায়ার ইত্যাদি জ্বালিয়ে দেওয়ার ফলে যে মারাত্মক ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা এই বায়ুমন্ডলকে করে তোলে উষ্ণ ও দূষিত। এই দূষণের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় মানুষ আর শুধু তাই নয়, যারা বর্তমানে এই পৃথিবীতে আছে তারা তো বটেই, যারা এর পরেই পৃথিবীতে আসবে, তারাও কিন্তু রোগগ্রস্ত হয়েই আমার-আপনার পরিবারে আসবে কারণ বেশ কিছু জেনেটিক রোগের মধ্যে হাঁপানি বা অ্যাজমা হলো এমন একটি রোগ, বাবা-মা বা বংশের কারোর যদি এই রোগ থাকে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগে আক্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শ্বাসকষ্টজনিত এই রোগ আরও বহু মাত্রায় বেড়ে যায় দূষণের কারণে, তাই আমরা যখন বুঝবো, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করার ফলে শুধু আমরা নই আমাদের সন্তানরাও রোগগ্রস্ত হয়েই এই পৃথিবীতে আসবে, সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবে না বেঁচে অসুস্থ শরীরে বেঁচে থাকবে এবং এই পৃথিবীর সৌন্দর্য ঠিক ভাবে ভোগ বা উপলব্ধি করা থেকে বঞ্চিত হবে, তখনই হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে আমরা বিরত হবো, কারণ আগে নিজে, তারপর নিজের জন, আর তারও পরে জনগণ। প্রত্যেকে নিজের এবং নিজের জনের কথা মাথায় রেখে যদি এই কাজ করা থেকে বিরত থাকে, তাহলেই এই ভাবনা পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করার কাজে একটা বড় ভূমিকা পালন করবে এবং আরো একটু মসৃণ হবে স্থায়ী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার পথ ।