।। পঞ্চম অধ্যায়।।

অর্থনীতি এমন একটা বিষয় যা একটা গোটা দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ও সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে। মানুষের ব্যক্তিগত রোজগার যখন ক্রমশঃ নিম্নমুখী হতে থাকে, বেকারত্ব বেড়ে যায় কোন দেশে অথবা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় তখন একমাত্র সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই পারে সেই দেশকে অর্থাৎ সেই দেশের মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে। আসলে অর্থনীতি তত্ত্ব ও তথ্যসমৃদ্ধ কোন বিষয় নয়, যা শুধুমাত্র বইয়ের মলাটের মধ্যে কালো কালো অক্ষরে আবদ্ধ থাকবে। বেগবান নদীর মত অর্থনীতি সতত সচল ও জীবন্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক দেশেই অর্থনীতিতে মানুষের একেবারে মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে সেই ভাবে ততখানি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় অন্য বিষয়ে, যেমন- সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে। এই সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, সেই ব্যয় বরাদ্দ যদি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অতি দরিদ্র মানুষের জন্য বাসস্থান, যে দেশ কৃষির উপরে নির্ভরশীল, সেই সব দেশে কৃষকদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পে পর্যাপ্ত সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা যাতে দেশের শিল্প ব্যবস্থা সমৃদ্ধশালি হয়। আর এ কথা আমরা সবাই জানি যে একটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততটাই শক্তিশালী, যতটা শক্তিশালী সেই দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এখানে অবশ্যই একটা কথা মনে আসবে এবং আসাটাই স্বাভাবিক তাহলে কি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার স্বার্থে কোন খরচ হবে না? সামরিকভাবে শক্তিশালী কোন দেশ কি তাহলে যখন-তখন কম শক্তিশালী কোন দেশকে আক্রমণ করে তাকে কুক্ষিগত করবে? এর উত্তর না এবং না। আর এখানেই আমার ভাবনায় এমন এক অর্থনীতির কথা আছে যা কার্যকর করতে পারলে, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি দেশ আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে আর সবচেয়ে বড় কথা এক দেশ আরেক দেশকে আক্রমণ করে তার সামরিক শক্তি, জনশক্তি ক্ষয় হয় এবং বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি কিছুতেই হতে চাইবে না। জানি কেউ মুচকি মুচকি হাসছেন, কেউ  ভুরু কুঁচকোচ্ছেন আবার কেউ কেউ হয়তো আরেকটু এগিয়ে ভাবছেন, সামনাসামনি একে কোনদিন পেলে... না, আমি এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না, কারণ সত্যিই যদি কোনদিন আপনাদের মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়, তখন আদর করে আমার গাল টিপবেন বা ভীষণ রেগে আমার গলা টিপবেন সেটাও আমি জানি না, তবে আমার দিক থেকে আমি কোন ইউটোপিয়া-র কথা বলছি না। আমি জানি কল্পনার সুখ রাজ্য শুধুমাত্র কল্পনাতেই থাকে। আমি আমার ঘরে নরম বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে কল্পনা করতেই পারি যে আমার চারপাশে একেবারে শান্তির বাতাবরণ রয়েছে, কিন্তু সেটা উটপাখির বালিতে মুখ গুঁজে নিজেকে নিরাপদ ভাবার মতো মুর্খামি ছাড়া আর  কিছু যে নয়, সেটুকু জ্ঞান যে আমার আছে, এটা কিন্তু আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। 
দুটি প্রধান ধরণের অর্থনীতি হল মাইক্রো ইকোনমি ও ম্যাক্রো ইকোনমি। আমার ভাবনায় যে অর্থনীতি রয়েছে, আমি তার নাম দিয়েছি- গ্রাটিটিউড ইকোনমি বা হ্যাপি ইকোনমি।  দিজ ইকনোমি বিগেটস অ্যাবসোলিউট হ্যাপিনেস ইফ ইট ইজ ইম্প্লিমেন্টেড প্রপারলি এন্ড ইউনিভার্সালি। এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সারাবিশ্বে বাস্তবায়িত হওয়া কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। এই অতি বৃহৎ পৃথিবীর যেকোনো অংশে যে কোন ভূখণ্ডের উপরি আমরা দাঁড়িয়ে থাকি না কেন, আর সেই ভূখণ্ডের নাম যাই হোক না কেন, সেটা যে দেশের অন্তর্গত হোক না কেন, আমরা যদি এই কথাগুলো উপলব্ধি করতে পারি যে আমরা যে যা পেয়েছি, যে  যা নিয়েছি, যে যা হয়েছি, তার সমস্ত টুকুই এই পৃথিবী থেকে নিয়েছি আমরা। কোন কিছু আমাদের নয়; পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ও সম্পত্তি একমাত্র এই পৃথিবীরই মালিকানাধীন, আর কারোর নয়। একদিকে আমরা প্রতি মুহূর্তে বলে থাকি যে আমরা খালি হাতে এসেছি, আবার খালি হাতেই এই পৃথিবী থেকে চলে যাব। এই  কথাটা অতি সত্য কথা। এইখানে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির কথা যদি ওঠে, তাহলে আমি বিনীতভাবে পাঠক বন্ধুদের শুধু এইটুকুই মনে করাতে চাই যে উত্তরাধিকারসূত্রে যতই হোক বা যত বিপুল পরিমাণ হোক না কেন সম্পত্তির পরিমাণ, সেই সম্পত্তি কেউ কোনদিন অন্য কোন গ্রহ থেকে নিয়ে আসেনি। আনতে পারে না। আবহমানকাল থেকে নিয়ে আজ এই মুহূর্ত পর্যন্ত, যখন আমি এই লেখাটা লিখছি, আমরা কেউ কোনদিন এক বিন্দু সম্পত্তি সৃষ্টি করতে পারিনি! যে আগুন জ্বালাতে শেখাকেই আমরা সভ্য হওয়ার দিকে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া বলে উল্লেখ করি, সেই আগুন জ্বালানোর উপাদানও সেই মানুষরা সংগ্রহ করেছিল এই পৃথিবীর বুক থেকেই আর এই পৃথিবীতে দাড়িয়েই শিখেছি আগুন জ্বালাতে। সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্যবার যা এই আগুন জ্বালাতে শেখার কথা অপার আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করি, তখন কি একেবারের জন্যও এই পৃথিবীর কথা কোনোদিন কারোর মনে এসেছে? আসেনি, আমি অতি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, কোনদিনই কারোর  মনে আসেনি। আসলে এই দিক দিয়ে আমরা কখনও ভেবেই দেখিনি, বা আমাদের ভাবানোই হয়নি! যে বাবা- মায়ের জন্য এই পৃথিবীর বুকে আসি, সেই বাবা- মায়ের, আমাদের প্রতি আদর, ভালোবাসা,আদর- যত্ন, দায়িত্ব, কর্তব্য- সবটুকুই একেবারে  টেকেন ফর  গ্রান্টেড বলে ধরে নিই। আমাদের সঙ্গে সারাক্ষণ যারা থাকে, সমস্ত রকম বিপদ থেকে যারা আগলে রাখে, সন্তানের ভালো-মন্দ, হাসি-কান্নাকে যারা নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়, তাদেরকেই কি আমরা উপযুক্ত সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানাতে শিখেছি? আমাদের শখ, আবদার বা অনেক সময়েই দাবি মেটাতে বাবা-মাকে কি অসুবিধা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়,  তা কি ভেবেছি কখনো আমরা? এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা থাকেনা আমাদের! আসলে বহু বহু যুগ ধরে বাবা-মায়েদের যে কথাটা সন্তানদের শেখানো উচিত ছিল, সেটা হল এই পৃথিবী শুধুমাত্র তোমার নয়, আমরা এবং আমাদের মত সমস্ত মানুষ যে আসতে পেরেছে, তা এই পৃথিবীর জন্যেই! সে যদি তার কোল পেতে না দিত, তাহলে আমরা জন্মগ্রহণ করতাম কিভাবে বা জন্ম দিতামই বা কি করে? ‘ভূমিষ্ঠ’ হওয়া কথার মধ্যেই তো ভূমিকা রয়েছে! পৃথিবী যদি তার ভূমি আমাদের জন্মের জন্য আনন্দের সহিত দান না করত, তাহলে কি জন্ম দেওয়া, জন্ম নেওয়া- কোনটাই সম্ভব হতো? দারুন এক গালভরা কথা বলা হয়, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো; অথচ এই কথা বলার সময় মনের মধ্যে না থাকে ভূ অর্থাৎ পৃথিবীর কথা আর না থাকে ভূমি অর্থাৎ মাটির কথা; অর্থাৎ অর্ধসত্য একটা কথা! অর্ধসত্য একটা কথা পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে কি! অতি সুসন্তান যারা, সারা পৃথিবী  জোড়া যাদের নাম, যশ, খ্যাতি- তাদের বাবা- মা তাদের নিয়ে আজীবন গর্ববোধ করে, কিন্তু জীবনে একবারও কি কপালে হাত ঠেকিয়ে মনে মনে এই কথা বলে যে এই পৃথিবীতে আমরা আসার সুযোগ পেয়েছি তা এই পৃথিবীর বদান্যতায় আর আমাদেরও সন্তানরা এসেছে তারই জন্যে। না, একবারের জন্যও মনে হয়নি তা। 
আমরা কথায় কথায় বলি ,আমাদের শিকড়ের সন্ধান করতে হবে, আমাদের শিকড় জানতে হবে। অথচ প্রাচীনতম যে শিকড়, সেই শিকড় সম্পর্কে আমরা চরম উদাসীন আর এই উদাসীনতা হলো এক আশ্চর্য আত্মঘাতী উদাসীনতা। যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম যে এই পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক একমাত্র পৃথিবী, তার এই বিপুল সম্পদ সে যেমন আমাদের ভোগ ও উপভোগ করার জন্য একেবারে বিনামূল্যে উপহার দিয়েছে, সেই সঙ্গে কিছু অলিখিত শর্তও দিয়েছে সে। এই পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও আমাদের। আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের। সুন্দর রাখতে হবে চারপাশ। নিবিড় সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা করতে হবে। এই সৌন্দর্যায়নের মধ্যে শুধু ছোট ছোট ব্যক্তিগত উদ্যোগ একেবারেই যথেষ্ট নয়। একেবারে সরকারি স্তরে খুব বড় আকারে উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বিশুদ্ধ ও নির্মল করার জন্য। এ বিষয়ে যা যা গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম হলো বৃক্ষরোপণ। একটা, দুটো নয়। কয়েকশো নয়, হাজার হাজার গাছ লাগাতে হবে চারপাশের ভয়ংকরভাবে দূষিত পরিবেশকে নির্মল করার জন্য। খাদ্য গ্রহণ না করে  কয়েক ঘন্টা এমনকি কয়েকদিন মানুষ থাকতে পারে,  জল পান না করেও অনেকক্ষণই মানুষ কাটিয়ে দিতে পারে কিন্তু এমন কোন মানুষ তো দূরের কথা কোন প্রাণী আছে যে অক্সিজেনের অভাবে সুদীর্ঘ কয়েকঘন্টা তো অতি দূরের কথা, কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচতে পারবে? উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার এবং কঠোর একটি অক্ষর- না। জলই যে জীবন- একথা সর্বজনগ্রাহ্য এবং সর্বজনমান্য। কিন্তু একথাও তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই জলই অনেক সময়, অনেক সময় কেন বহুসময়ই ধ্বংসের ও প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেটা প্রাকৃতিক দুর্যোগেই প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ যে জল জীবনদায়ি, সেই জলই আবার প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু গাছ, তা সে শিশু চারাগাছই হোক অথবা মহীরুহ। একটি গাছ জন্ম থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত, যার অভাবে কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই এই প্রাণী জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই জীবনদায়ি অক্সিজেন বিরামহীনভাবে সরবরাহ করে যায় সে। আর বড় অদ্ভুত কথা এই যে, বেশিরভাগ সময়ই একটি গাছ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণের সুযোগ পায় না! হ্যাঁ, সুযোগ পায় না, কারণ তার অনেক আগেই নিজেদের স্বার্থে মানুষ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে, জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করে দেয় তাদের। না, একটু সংযোজন প্রয়োজন। ধ্বংসের দিকে শুধু গাছেদের নয়, অত্যন্ত দায়িত্ব সহকারে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে চলেছি। এইখানেই আমি আমার ভাবনায় আসা গ্রাটিটিউড  ইকোনমির কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। 
ধরা যাক, এই পৃথিবীতে কেউ লক্ষ, কোটি আবার কেউ কেউ হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার মালিক। কোন বিলাসিতাই তাদের কাছে অধরা নয়। এই মানুষের সংখ্যা সারা পৃথিবীতে অনেক। মানুষের কাছে তার সম্পদ পরম প্রিয়, আর লাভের আশা না থাকলে প্রথমেই সে তার টাকা কোথাও লগ্নী করতে চায় না। কিন্তু যদি সে উপলব্ধি করে, তার আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে একমাত্র এই পৃথিবী, তাহলেই সেই পৃথিবীকে সুন্দর ও ভালো রাখার জন্য তার সম্পদের সামান্য কিছু অংশ ব্যয় করতে রাজি হবে। বিনিময়ে কোন আর্থিক মুনাফার আশা না রেখে। কৃতজ্ঞতাবশতঃ আর এখানেই গ্রাটিটিউড ইকোনমির বিশেষত্ব। আর এই ভাবেই যদি একটা গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে জেলা, জেলার সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্য ও সেই গণ্ডি পেরিয়ে একটি দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের মানুষ এই থিওরি অফ গ্রাটিটিউড ইকোনমিকে ফলো করে, তাহলে দেখা যাবে সমস্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যে ভারসাম্যের অভাব আছে, তা দূর হবে। আমূল পরিবর্তন আসবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষ ভীষণ ভাবে উপকৃত হবে কারণ বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ আসবে আর এই ভাবেই অর্থনৈতিক শ্রেণী বৈষম্য দূর হবে। অর্থনীতিবিদরা নানা সময়ে বলে থাকেন একটি দেশের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষ সবল হবে তখনই যখন তাদের হাতে অর্থ আসবে। এই থিওরি অফ গ্রাটিটিউড ইকোনমিই পারে গরিব মানুষকে আর্থিক দিক দিয়ে সবল করে তুলতে আর এর দ্বারাই একটি দেশের তথা বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামো সুদৃঢ় হবে।
একটি মানুষ যদি ইচ্ছে করে এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়েই সফলতা বলতে যা বোঝায় তার সবটুকুই অর্জন করতে পারে। সে সফলতা অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে যার, সে এই পৃথিবী। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের সুযোগ না পেলে, বেড়ে না উঠলে, নানাভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগই তো পাওয়া যেত না। এই কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা থেকেই একটা মানুষ ইনভেস্ট করতে পারে তার অর্থ। পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও নির্মল রাখা, বাতাস যাতে দূষণমুক্ত ও বিশুদ্ধ হয়, সেই কাজে অর্থ লগ্নি করা এবং  সৌন্দর্যায়ন অর্থাৎ যেখানে আমরা বসবাস করি তার আশেপাশে প্রচুর গাছ লাগানো এবং ময়লা, নোংরা, আবর্জনা সমস্ত পরিষ্কার করে, আশপাশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার কাজে সে ব্যয় করবে তার অর্থ। মানুষ যখন উপলব্ধি করবে তার উপার্জিত অর্থ তখনই প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষিত থাকবে, যখন সে এই পৃথিবীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবশতঃ পৃথিবীর জন্য কিছু করবে। ইন্সুরেন্স কোম্পানি মানুষের অর্থ, সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় বটে, কিন্তু এই পৃথিবী যদি বাসযোগ্য না থাকে, তাহলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কেমন করে! দূষণমুক্ত, নির্মল, সুন্দর পৃথিবীই একমাত্র পারে মানুষের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে! তাই একটি মানুষ যদি তার  সম্পদের কিছুটা পৃথিবীর জন্য ব্যয় করে, সেই অর্থ ফিরে পাওয়ার কোনো প্রত্যাশা না রেখেই তাহলে এই পৃথিবী তার অনেকগুণ ফিরিয়ে দেবে কয়েন্স এ নয়, কাইন্ডিসে। কেমন করে? আমরা সেই আলোচনায় আসি বরং। পৃথিবী দূষণমুক্ত ও নির্মল হলে, বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়লে মানুষ সুস্থভাবে বাঁচবে অনেক বেশি দিন, রোগে আক্রান্ত হবে অনেক কম এবং আগামী দিনে যে মানব সন্তানরা এই পৃথিবীতে আসবে, তারাও একটা সুন্দর, দূষণমুক্ত, স্বাস্থ্যকর পৃথিবীতে আসবে। 
সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যাশা তার কাছে থাকে, কিছুটা পাওয়া হয়েছে, আরো কিছু পাওয়ার বাকি আছে! কিন্তু পৃথিবী সমস্ত কিছু উজার করে দিয়েছে আমাদের। নিজের বলতে কিছুই সে রাখেনি হাতে। তাকে দূষিত করেছি আমরাই, আমাদের সীমাহীন লোভ লালসা চরিতার্থ করার জন্য তার পরিণামে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে এনেছি আমরা নিজেরাই। মানুষের শুভবুদ্ধি আর কৃতজ্ঞতার ঋণ স্বীকারই বাঁচাতে পারে আমাদের। পৃথিবীকে সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য যদি ব্যয় করি তাহলে এই প্রচেষ্টার ছোট্ট প্রদীপ অসংখ্য মানুষের মনে জ্বালিয়ে দেবে অতি উজ্জ্বল আলো আর এই প্রচেষ্টাই উদ্বুদ্ধ করবে পৃথিবীর অজস্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতি কর্তব্য পালনের জন্য সম্পদের কিছু অংশ ব্যয় করতে আর কে বলতে পারে হয়তো এই গ্রাটিটিউড  থিওরি বা হ্যাপি থিওরিই পড়ানো হবে পৃথিবীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। 
গ্রাটিটিউড ইকোনমি বা হ্যাপি ইকোনমি অথবা আমার হঠাৎ করে মনে আশা আর একটা নাম -ফুল ডিভিডেন্ট ইকোনমি। এর মধ্যে যে নামটা ইচ্ছে হবে সেই নামটাই গ্রহণ করবেন। সেই স্বাধীনতা তো সম্পূর্ণভাবে আপনাদেরই। আমার প্রিয় পাঠকেরা আর  নামে কি আসে যায় বলুন তো- আমাদের সবার প্রিয় সেই মানুষটি তো কত কত বছর আগেই সেই অমোঘ কথাটি বলে গিয়েছেন- হ্যাঁ, বুদ্ধিমান পাঠক প্রসঙ্গ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গিয়েছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন; আমি আপনাদের হাসিমুখগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আর একজন পৃথিবীবাসী হিসেবে পৃথিবীবাসীদের ভালোবাসামাখা নির্মল হাসিই আমার এই লেখার প্রেরণা! হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই ধরেছেন- আমি সেই মানুষটি, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কথাই বলছি; তিনিই তো লিখেছিলেন- হোয়াটস ইন এ নেম? দ্যাট হুইচ উই কল এ রোজ বাই এনি আদার নেম উড স্মেল অ্যাজ সুইট। আমার প্রস্তাবিত এই ইকোনমিও তো তাই। কল ইট বাই এনি নেম, ইট উইল ওয়ার্ক অ্যাজ এন ইনভিজিবল গারল্যান্ড অফ্ সো মেনি কালারফুল ফ্লাওয়ার্স ইন ফর্ম অফ দ্য সিটিজেনস অফ দিজ আর্থ।