পনেরো

এবার আসি আমাদের সাহিত্য সৃষ্টির বিষয়ে৷ সাহিত্যে কার না লোভ হয়! কারণ সাহিত্য দিয়েই সভ্যতার শুরু, সাহিত্য দিয়েই সভ্যতার চলমানতা, সাহিত্য দিয়েই সবকিছু৷
আমরা চিন্তা করলাম যে, যদি কবিতা-গান ইত্যাদি দিয়ে আমরা এই দিবসটাকে পালন করতে চাই, তবে-ই এই দিবস নিয়ে পালন করার জন্য সকলে আগ্রহী হবে, সারা পৃথিবী জুড়ে, এটা নিয়ে আগ্রহ দেখা দেবে৷
সেজন্য আমরা কিছু বিষয় ভিত্তিক ব্র্যান্ড কবিতা গান ইত্যাদি নতুন ভাবে সৃষ্টি করলাম৷ আসলে আমি নিজেই কবিদের সাথে কথা বললাম যে আমি কী চাই৷
সেইমত আমি বেছে সংগ্রহ করে সেগুলির উপযুক্ত ভাবে প্রকাশিত হবার জন্য ব্যবস্থা করি ও অর্থ খরচ করে চলি৷
মূল ইংরেজি লেখাগুলি যেমন অন্য অনেক ভাষায় অনুবাদ হবে, আবার বাংলায় লেখাগুলিও ইংরাজিতে ও অন্য ভাষাগুলিতে অনুবাদ হবে৷ কিন্তু আমি আপাতত ইংরাজি ও বাংলা---এই দুটি ভাষা নিয়ে কাজ করলাম৷ অন্য ভাষাগুলি দিয়ে কিছু সম্ভব হলে আমি করবো, পৃথিবীতে নানা দেশের প্রয়োজনে তাঁদের মতো করে৷
মূল বিশ্ব ভাষা ইংরাজি৷ ওটা হলেই আসল কাজটা হোলো৷ বাকি প্রধান পরিচিত ভাষাগুলি নিয়ে পরে ভাবা যাবে বা পৃথিবী জুড়ে অনেকেই ভাববেন৷
শুরু করা যাক, ওয়ার্লড এ্যানথেম, বাংলায় যাকে বলতে পারি বিশ্বস্তোত্র৷ আসলে গড় নিয়মে একে বিশ্বসংঙ্গীত বললেই ভালো৷ যদিও ব্যাকরণগত নিয়মে স্তোত্র ও সংঙ্গীত একটু আলাদা, মানে যেমন আমাদের জনগণমন, বিশ্বকবি রবিঠাকুরের লেখা, আমাদের জাতীয় স্তোত্র বলে গ্রহণ করা হয়েছে৷ আর সাহিত্য সম্রাট---বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ আমাদের জাতীয় সংগীত৷
জাতীয় স্তোত্র প্রতিটি অনুষ্ঠানের আগে বা পরে বা দুটো সময়ে বাজানো হয়, পার্লামেন্টেও তাই৷ আমরা জানি৷
সেই ভাবে ধরার দরকার নেই আমাদের ওয়ার্ল্ড এ্যানথেমকে৷ বরং এটিকে আরো সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় করে মানুষ গ্রহণ করুক, এটা আমরা চাই৷ তাই, এক্ষেত্রে আমরা বিধিনিষেধগুলি সরল করে দিয়েছি৷ বিশ্ব শান্তির সংগীত মানে ওয়ার্ল্ড এ্যানথেমটা সকলে শুনুক। গাইতে হলে সঠিক ভাবে গাইতে হবে, সঠিক বাজানো সহ৷
কারণ, সংঙ্গীত বা কবিতার বিকৃত প্রকাশ তো আকর্ষণ তৈরি করবে না৷ তাতে মন সুস্থও হয় না৷ উদ্দেশ্যও অপূর্ণতা থাকে৷ তাই সকলেই এটিকে স্তোত্র বা সংঙ্গীত যাই বলুন না কেন, এর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হলে সকলেই এটাকেই কাজে ব্যবহার করবে এর উপযুক্ত মর্যাদা রেখে৷
শুরু করছি, সরাসরি ইংরেজিতে লেখা আমাদের ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ওয়ার্লড এ্যানথেম দিয়ে৷ যেটা আমরা মাননীয় মহান রাষ্ট্রসংঘকে উৎসর্গ করেছি, পৃথিবীর সকলের ব্যবহারের জন্য৷
তবে পাঠকের পড়তে ভালো লাগার জন্য প্রথমে দিলাম, তেমনি এর পর দেব আর এক লেখকের কবিতা ও সংঙ্গীত, তিনি কবি-শিক্ষক তপনকুমার মাইতি, তাঁর লেখা কবিতা ‘পৃথিবীর জন্মদিনে’---যে কবিতাটা শুনে ঋদেনদিক বলেছিলেন যে এটি এমন একটি সৃষ্টি যেটি তিনিও একশ বছর চেষ্টা করেও পারতেন না৷ কারণ নাকি এই যে, এক এক জনের হাত দিয়ে বিশেষ কিছু লেখা বেরিয়ে পড়ে, সেটা অন্য কারোর হাত দিয়ে আশা করা যায় না৷
ঋদেনদিকের সাথে আমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিরোধ হয়েছে, হয়তো এমনও হতে পারে, উনি অনেক রকম বিশেষ ক্ষেত্রে এমন কিছু বুঝতে পারেন সেটা আমি পারিনা অনেক সময়, কারণ আমি এই দেশ ও জীবজগতের সামগ্রিক পটভূমি নিয়ে চর্চা করিনি৷ তাই ওঁনার অগ্রিম বলা অনেক কথাই পরে হুবহু মিলে যায়৷ কিন্তু একটা জিনিস ভালো লাগে, কেউ ওনার কথা নিক বা না নিক উনি চুপ থাকেন, ক্ষোভবশতঃ কিছু  বললেও যে-কাজটি করেন সেটা সঠিক ভাবে না করা পর্যন্ত ছাড়েন না....এইসব অনেক কিছুর জন্য, সর্বোপরি আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে উনি খুব সাবলীল ভাবে কাজ করেন, সেই তুলনায় আবার লোকাল বা স্থানীয় বিষয় নিয়ে ওনার দক্ষতা বা ইন্টারেস্ট সেভাবে দেখিনি৷ তবে ওঁনার অনেক কথা এক্ষেত্রেও মিলে যায়৷
আসলে এইরকম একজনকে আমার দরকার ছিল, আবার এটাও সত্য, যে যার বিভাগে কাজটা উন্নত মাত্রায় না করলে এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক সম্মানের অবস্থানে তুলে ধরা যেত না৷ সেই দিক থেকে সকলে সমান জরুরি ও আন্তর্জাতিক৷ তবে পরিচালন ব্যবস্থায় পরশ্রীকাতরতাহীন ও সার্বিক ভাবনায় দক্ষ কাউকে দরকার, বিশেষত এই আন্তর্জাতিক কাজে, যেখানে কোনো সামান্য ভুল বা গোঁয়ারতুমির ক্ষমা নেই, সেখানে মনে হল আমি বিশ্বমাতার আশীর্বাদে সঠিক মানুষকেই পেলাম৷ তার কারণ, পদ্ধতিগত সফলতায় আমরা অপেক্ষাকৃত দ্রুত এগিয়ে চলেছি৷ আমাকে অ্যাডভাইজর-ইন-চার্জ বারবার বলেন, ‘মাইকেলদা, আমাকে দিয়ে আপনার প্রোজেক্টে আর কোনো কবিতা বা গান লেখাবেন না, কারণ যত বেশি জনের থেকে সৃষ্টি নেবেন তত বহুরকম স্বাদের আকর্ষণ তৈরি হবে৷ তবে যাকেই যেখানে নিন, এই আন্তর্জাতিক কাজের সাথে মানানসই স্বভাব দেখে নেবেন৷ তাছাড়া অনেকেই কষ্ট করছেন আড়ালে, তাঁরাও সুযোগ পাক৷’
এই সব শুনে আমি নিজের মধ্যে স্বস্তি পাই৷ কারণ, কোনো সংস্থার ভিতরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ভিতর বোঝাপড়া থাকলে সংস্থার কাজের ও উন্নতির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হয়৷ আমি তাই স্বস্তি পেলাম৷ এবার দেখুন লেখাগুলিকে হুবহু তুলে দিলাম, আফিসিয়ালি যে ভাবে এগুলিকে সব জায়গায় পাঠানো হয়েছে৷
WORLD ANTHEM
We are the citizen of the earth
Lyricist: Ridendick Mitro
Music Director: Kumar Chanchal
Final Recording Singer: Mou (Anusree) Acharjee
Purpose and thought inspired by Michael Tarun

 

1

We are the citizen of the Earth,
Oh, man-woman,
And the children,
We born and brought up here with the same heart,
You everybody say,

Love is one and only the way.
Let’s salute our mother Earth, oh friends,
Get united get independent.

 

2

Alas, we give pain and grief to her!
She cries in veil,
Though she continues no fail---
To giving our needs to share,
But we divide her into many parts near and far,
And it is the words pure: ---
Who serves mother Earth serves creator?
You everybody say,
Love is one and only the way.

3

So, let’s preserve her in all the sorts,
And go to nurse her at the remotes,
Alas, we get busy smashing her repeatedly,
But we get defeated to smash her greatly,

So, all of you say in one love
You everybody say,
Love is one and only the way...
Din, Din, Din!
Di-Din Din,
Din, Din, Din!
Di-Din Din,
Din, Din, Din!
Di-Din Din,
Din-Din

 

এত কথা বলছি এই কারণে যে, আমরা অনেকেই খুব ব্যস্ত, নানা ঝামেলায়, তাই যাতে আমাদের সব বিষয়গুলি আপনারা সহজে বুঝে নেন, সেইজন্য এতো শ্রম দিয়ে খোলসা করে বলা৷ তাই কোনো ভাবেই কেউ বিরক্ত বোধ করবেন না, আশা করি৷
কারণ এটি সম্পূর্ণ একটি নতুন বিষয়, এখানে এভাবেই তাই বললাম।
যা বলছিলাম, বিশ্ব সংঙ্গীতের ব্যাপারটা আমাদের ব্র্যান্ড নয়, সারা বিশ্বের ব্র্যান্ড সং৷
 এবার বলি তপন কুমার মাইতির ‘পৃথিবীর জন্মদিনে’ কবিতাটির পর, আমরা পেলাম তপনবাবুর-ই দুটি সংঙ্গীত ‘পৃথিবী ও পৃথিবী, নাও গো আমার প্রণাম’ ও ‘সুস্বাগতম, অভিনন্দন পৃথিবী তোমায়’৷ আর আছে লোকগীতি শিল্পী গৌতম দের লেখা লোকগীতি ‘এ পৃথিবী ও পৃথিবী’৷ পরে আমি ঋদেনদিকের ‘আজব মানুষ’ বলে একটি কবিতা নিলাম৷ পরে আমি বলাতে ওটা আলাদা ভাবে উনি ইংরেজিতে লিখলেন, ‘পিকুলিয়ার ম্যানকাইন্ড’৷ তপন কুমার মাইতির ‘পৃথিবীর জন্মদিনে’ কবিতাটিতে যেমন বিশ্ব সৃষ্টির আদি থেকে বর্তমান অবধি সব কিছুকে অসম্ভব নিপুণতায় তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ঋদেনদিকের ‘আজব মানুষ’ বা ‘পিকুলিয়ার ম্যানকাইন্ড’-এ বলা হয়েছে মানুষ ভালোকে জেনেও কীভাবে এড়িয়ে গিয়ে নিজেদের দুর্গতি টেনে আনে! উপযুক্ত রস দিয়েই কবি সেই কাজ করেছেন৷ অন্যদিকে গৌতম দে-র লোকগীতিটি খুব সাংকেতিক আনন্দ দেয়৷ জানিনা আমি কী করে এইভাবে এঁদের পেলাম, আর যা পেলাম তা বিশ্বমানের, যা এখানে দরকার৷
এগুলি পারিপার্শিক কথা, না বললে বিষয়ের পূর্ণতা আসেনা৷ এইগুলির সংক্ষেপ আলোচনা অন্য অধ্যায়গুলিতে কিছু ছুঁয়ে গেছি, এখানে এইভাবে না বললে, এই লেখাগুলিকে পড়বার সময় পাঠক একটা পূর্ণতা পাবেন না৷

সুদীর্ঘ কবিতাটিঃ---

পৃথিবীর জন্মদিনে
তপনকুমার মাইতি
ইংরেজি অনুবাদঃ ঋতুপর্ণা রায়চৌধুরি

কয়েক কোটি বছর আগে---কেউ ছিল না স্থল-ভাগে,
‘প্যানজিয়া’ কী জানতো না কেউ --- ‘সিয়াল সীমা’ বুঝতো না কেউ,
শুধু শ্যাওলা ছিল জলের তলে
দুলতো সে তো হেসে খেলে৷

তার থেকে যে প্রাণের সাড়া --- প্রাণের ভিতর তার-ই ধারা,
শুরু হোলো সেদিন থেকে৷৷

তাই সৃষ্টিকর্তা আঁকল ছবি --- একেই নাম দিল তার আজ পৃথিবী,
যত কিছুই সৃষ্টি হোলো --- সব কিছু এই পৃথিবী পেলো,
তার-ই মাঝে আমরা সবাই --- মিলে মিশে থাকতে যে চাই,
বড় সুন্দর মোদের পৃথিবী যে৷
পৃথিবী নয় কারোর একার --- বহু কিছু আছে দেখার,
তাকে ভালো রাখার সুস্থ রাখার
এ দায় যে শুধু আজকে সবার৷
পৃথিবী যদি সুস্থ থাকে --- সবাই জেনো সুস্থ রবে,
ভয়ঙ্করী রূপ দেখোনি --- কখন যে তার প্রলয় হবে,
শান্ত হলে মায়ের সমান, তার কাছে যে সবাই সমান,
কে বৌদ্ধ কে খৃষ্টান --- কে হিন্দু, কে মুসলমান,
কারো কোনো নেই ব্যাবধান,
শুধু এক রক্ত এক নাড়ির টান,
সবাই সমান সবাই সমান৷
আবার সময় হলে যাবো চলে
এই পৃথিবী মায়ের কোলে৷৷
পৃথিবী তোমায় সব দিয়েছে --- দিয়েছে সে যতটুকু
বিনিময়ে তুমি বলো, --- দিয়েছো তাকে কতটুকু,
আর নেয়নি কেড়ে এই পৃথিবী
তোমার দেখার স্বপ্ণটুকু৷

পৃথিবী থেকে পেয়েছো সব-ই --- কত খুশি কত হাসি,

একবার-ও কি বলছো তাকে
আমরা তোমায় ভালোবাসি!

সে নিয়েছে সবার-ও ভার
আমরা কি আর আছি গো তার!
আমরা যেন ব্যস্ত সবাই,
অবহেলায় তাকে ফেলে

পৃথিবীর মাঝে আছে সব-ই
গাছপালা পশুপাখি আকাশ মাটি নদী জল,
উঁচু নীচু পাহাড় পর্বত শস্য শ্যামল সোনার ফসল,
সবকিছু সে সাজিয়ে দিয়ে --- তার উপহার সে দিয়েছে,
পৃথিবীর তরে আমাদের-ও করারও তো কিছু আছে,
তাই, আজ পৃথিবীর জন্মদিনে --- আসুন সবাই খুশি মনে,
পৃথিবী পাওয়ার আনন্দেতে সবাই মিলি এক সাথেতে,
এক-ই সুরে বলে উঠি --- পৃথিবী তোমায় ভালোবাসি,
বারে বারে যেন আসি,
তোমার কোলে আবার ফিরে,
ভুল করেছি তোমায় ভুলে৷৷
অযথা খুনোখুনি হানা হানি --- জীবন নিয়ে টানাটানি,
চাইনা এমন কোনো দিনই৷

আর বৃক্ষ ছেদন না করে ভাই --- বৃক্ষ রোপণ শুধুই করো,
যত ধ্বংসের হাত থেকে এই পৃথিবীকে রক্ষা করো,
আবার ভাই সব বোনের হাতে --- পরুক রাখী,
যত ভালো যত কিছু,
এসো, সব কিছুকে আঁকড়ে রাখি৷
আসুক নেমে এই পরিবেশ,
ভালো কাজের হয় না তো শেষ,
তাতে কী আর যায় এসে যায় --- কেউ যদি বা মন্দ বলে,
বাঁচবে তুমি সারা জনম --- তোমার কর্ম তার-ই ফলে৷৷
আর কী লাভ পাবে আমায় বলো,
এই পৃথিবী ধ্বংস হলে!

কবিতাটি দ্বিতীয় বছর নাটশালে আবৃত্তি  করেন কলিকাতার দুই বিখ্যাত বাচিক শিল্পী অচেনা মন্ডল ও শংকরসন মুখার্জি৷ মানুষ স্থির হয়ে শুনেছিলো, হাজার হাজার মানুষ৷ আমাদের ইউ-টিউব ও ওয়েব সাইটে দেখবেন কী ভাবে জমে ছিল পুরো পরিস্থিতি৷
এই কবিতাটি প্রথম বছর মঞ্চে উপস্থাপিত করা হয়েছিল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, অংশগ্রহণে ছিলেন সুচরিতা দাস, মেঘা সামন্ত, রূপায়ন সামন্ত, সাথী মন্ডল ও মালবিকা মাইতি৷

সংগীত ঃ
পৃথিবী ও পৃথিবী, নাওগো আমার প্রণাম
গীত রচনা ঃ--- তপনকুমার মাইতি, বাংলায় শিল্পী ঃ--- সর্বরী গুহসাহা৷
সুর ঃ--- মাধবী মজুমদার, মিউজিক এ্যারেনজার ঃ--- কুমার চঞ্চল
ইংরেজি অনুবাদ Mother Earth-O-Mother Earth ঃ--- ঋতুপর্ণা রায়চৌধুরি
ইংরেজি সুর ঃ--- ইন্দ্রজিত দে
ইংরেজি শিল্পী ঃ--- সোমলতা আচার্য চৌধুরী


পৃথিবী ও পৃথিবী
নাওগো আমার প্রণাম
তোমার কোলে জন্ম বলে
আমি যে ধন্য হলাম৷৷


ডেকেছি সকল জনে আমন্ত্রণে,
তোমার এ জন্মদিনে শুভক্ষণে,
জন্মদিনের কেক কেটে আজ
রাখব তোমার মান,
সাজাবো মনের সাজে,
তোমার বেদীধাম৷৷

ঘরে নয়, বেরিয়ে পড় সবাই চলে এসো,
ইচ্ছে হলে তবেই এসো,
যদি পৃথিবীকে ভালোবাসো,
এসেছো খুশি মনে মনের টানে,
যারা সব আজ এখানে এমনক্ষণে,
একটা কোনো দাও উপহার
ভালবাসার দান,
হতে পারে গোলাপ তার-ই নাম৷৷

ভালোবাসি পৃথিবী বলে এতো আয়োজন,
না হোলে এত সবের ছিল কী বা প্রয়োজন,
পৃথিবীর কাছে আছি ঋণে ভরেছি তার যত দানে,
যত কিছু এই ভুবনে দেখে যাই দুই নয়নে,
এসো ভাই এসো সবাই,
সবাই মিলে করি এসো পৃথিবী বরণ,
আজ করি তার জন্মদিন পালন,
সবার আগমনে ভরে উঠুক
এ ধরাধাম৷৷

একটা বিষয় এখানে বলা দরকার, সঙ্গীতের স্বার্থে সুরকারের ইচ্ছেতে ও গায়িকার উচ্চারণের সুবিধার্থে কোনো কোনো শব্দ বদলেছে বা নেওয়া হয় নি৷ কিন্তু এখানে তপনবাবুর হুবহু লেখাটা দেওয়া হল৷ গানের সময় যে টুকটাক বদলেছে, সেটা আর দিলাম না৷
তপনবাবুর পরে সংগীতটি দিয়ে আর বিষয়টিকে একঘেয়ে করব না৷ যেটা দেওয়া হোলো, যেটা দেওয়া হোলো না, গান, কবিতা ও অন্যান্য ভাবনাগুলিও ভালো লাগবে৷
সার্চ করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি --- ‘Art Mother Earth Foundation’এবং‘art21stcentury’.

এর ইংরেজি সংস্করণও দেখুন৷ এখানেও বিখ্যাত মিউজিক ডিরেক্টর ইন্দ্রজিত দে ও গায়িকা সোমলতা, পুরো নাম সোমলতা আচারিয়া চৌধুরি৷ যাঁদেরকে দিয়ে কাজটি করেছি আমরা৷ আগে এ নিয়ে বিষয়টি ছুঁয়ে গেছি৷ আবার এখানেও প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে৷ এটা নিয়ে হয়তো আর একটু খুলে বলা দরকার৷ ‘পৃথিবী ও পৃথিবী, তুমি নাও গো আমার প্রণাম’ ও ‘সুস্বাগতম, অভিনন্দন পৃথিবী তোমায়’---এর অনুবাদ সৃষ্টি করলেন সেই ঋতুপর্ণা৷ অনুবাদ-সৃষ্টি বলছি এই কারণেই যে, ইংরেজির জন্য আলাদা  সুর হচ্ছে৷ সেই মতো ভাষা, টেকনিক ও সময়ের ওপর নির্ভর করে হবে এই গানের ইংরেজি সংস্করণ৷ যদি এটা প্রথমে ইংরেজিতে লেখা হোতো, তবে এটার সুর বদল হোতো না৷ কারণ, ইংরেজির ট্রেন্ডটা সব  ভাষাতে খাপ খায়৷ যেমন, ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ সঙ্গীতটি সব ভাষাতে এক রকম৷ আমাদের মূল ইংরেজি বিশ্বসংগীত ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ’-ও থাকবে একসুরে সব ভাষাতে৷ এগুলি আমি খুলে বললাম, যাতে কেউ আমাদের এই বিষয়ের কাজ গুলি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা না করেন৷ কারণ, এখানে আমার কিছু করার নেই৷ এটা সৃষ্টিশীলদের ব্যাপার৷
আর একটা কথা বলি, সব ক্ষেত্রেই ভালোলাগাটা পাঠক, শ্রোতাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের বিবেচনার মধ্যে যেমন পেরেছি তেমন৷
একটি কথা এখানে, কোনো লেখক, মিউজিক ডিরেক্টর, গায়ক-গায়িকা কত হাজার কোটি টাকার মালিক, তাঁদেরকেই বৃহৎ প্রতিভা ভেবে আমরা কাউকে দ্বায়িত্ব দিই নি৷ আমরা কাজ দিয়েছি যাদের দ্বারা কোনটা ভালো হতে পারে সেই বিবেচনা করে৷
এখানে ‘মাদার আর্থ ও মাদার আর্থ’ গানটা দিলাম না, ওটা এই গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদে থাকছে৷
আর একটি কথা, গৌতম দে-এর লোকগীতিটাই এখানে দেবো-দেবো করেও দিলাম না, কারণ ওটা খুব সুন্দর সাংকেতিক সংঙ্গীত, আপনি শুনতে শুনতে মুগ্ধ হবেন, সন্দেহ নেই৷
এখনো পর্যন্ত যে গানগুলোর ভিডিও করতে আমরা যে সব মডেল ব্যবহার করেছি, তাঁরা সকলেই পরিচিত নাম৷ পূজা মজুমদার --- যে একই সাথে পেশায় গায়িকা৷ যে প্রথমে আমাদের ওয়ার্ল্ড এ্যানথেমটি পরিস্থিতি রক্ষার জন্য কোনোভাবে ৯ই জুলাই ২০১৮ তে প্রেস ক্লাব কলকাতায় প্রথম গেয়েছিল৷ পরে নানা কারণে ওরা ভালো করে রিহিয়ারসালে সময় দিতে না পারায় অন্য গায়িকা --- মৌকে দিয়ে গাওয়াতে হয়৷ মডেলিং এ ওর সাথে দেবলীনা, পল্লবী, ওয়ার্লড এ্যানথেম এর মিউজিক ডিরেক্টর কুমার চঞ্চলের মেয়ে বেবি সায়নি, মানিক সেন ও অন্যান্য। এবার এখানে শেষে যে কবিতাটি দিচ্ছি, এটি জানি সবাইকে ধাক্কা দেবে৷ কিন্তু কিছুই করার নেই৷ কারণ এই কবিতাটি আমাদের নিজের নিজের রূপ প্রবৃত্তি নিয়ে ভাবাবে৷ আত্মসমালোচনায় যদি ভয় পাই, তবে আমরা বদলাবো কী করে! এটিও তিন পৃষ্ঠার দীর্ঘ কবিতা৷ কবিতাটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আবৃত্তি হচ্ছে ও নানা সভাতেও অনেকে আবৃত্তি করেন৷ ২০১৮-তে হাই নিউজ টিভিতে মালবিকা মাইতি ও ২০১৯-এ মহাজাতি সদনে সুচরিতা দাস, মালবিকা৷

আজব মানুষ
ঋদেনদিক মিত্রো

মানুষের অনুভূতি বলো কী আজব!
করে যায় সে তো কত ভুল অনুভব৷
এত তার পড়াশুনা, এত ভাব ভাষা,
সবার প্রতি-ই নাকি তার ভালোবাসা!
তার সাথে আছে কত চাওয়া ও পাওয়া,
ভ্রমণের মোহে তার এথা সেথা যাওয়া৷
কত কী জিনিস কেনে -- ঘরটা সাজায়,
কত যন্ত্র বানিয়েই সেগুলি বাজায়৷
কত কিছু লেখালেখি কত গবেষণা,
কবিতা নৃত্য গানে সে মুগ্ধমনা৷
কত কী পোশাক পরে হয় সুন্দর,
কত শখ ও কথায় রয়েছে বিভোর,
বাড়িটা সাজায় আহা, কত ভালো করে,
খাওয়াতেই বন্ধুকে গৃহে আনে ধরে৷
করে কত উৎসব মেলা পার্বণ,
সত্যের হয়ে দেয় নিজের জীবন৷
মহান হয়েন  যাঁরা তাঁদের-ই তো নামে,
নানান দিবস ক’রে, নত হয়ে মানে৷
তাঁদের মূর্তি গড়ে এথা সেথা রেখে,
তাঁদের জীবন নিয়ে কত কিছু  লেখে৷
ভালোবেসে মরে যায় আত্মীয়দের,
ভালোবাসে লোকজন নিজের গৃহের৷
বংশধরের তরে রাখে সম্পদ,
যাতে না তাদের হয় অভাব, বিপদ৷
কত কী সৃষ্টি করে পায় সম্মান,
জগতের কল্যাণে করে দেহ দান৷
প্রিয়জন মারা গেলে  করে হাহাকার,
শুনে তো যাচ্ছ তুমি, কত বলি আর!
এত যার গুণ, সেই জাতিটা মানুষ,
আসল বিষয়ে নেই তার কোনো হুঁশ৷
যে-পৃথিবী থেকে সে সব কিছু  পায়,
নিজের জীবন আর শিক্ষা ও আয়৷
প্রিয়জন, প্রিয় কথা, প্রিয় দ্রব্য,
সব কিছু নিয়েও সে এতোটা অসভ্য---
পৃথিবীকে ভালোবাসা দিতে নেই হুঁস,
কী করে বলে সে নিজে --- মান-হুঁস মানুষ!
পৃথিবীকে কেটে কেটে নানা দেশ গড়ে,
ক্ষমতা দেখাতে কত যুদ্ধ-ই করে,
ধ্বংসের অস্ত্রই বানায় কেবল,
কে কাকে মারতে পারে করে কৌশল৷
বাজার দখল নিয়ে করছে লড়াই,
এ তাকে দমিয়ে দিয়ে করছে বড়াই৷
দেশ হতে দেশান্তরে মানুষ ছোটে,
সব কিছু  ছেড়ে ছুড়ে ঘুরছে পথে৷
তাদেরকে উদ্বাস্তু হিসেবেই দাগ,
দিয়ে অপরাধী করে বলা হয় ‘ভাগ!’
পৃথিবীবাসী হয়ে পৃথিবীর লোক,
উদ্ধাস্তু হয়ে যায়, কী আহাম্মোক!
আরো সে বলছে দেখো ভিন গ্রহে গিয়ে,
থাকবে সে অতি সুখে কত কী বানিয়ে৷
যে-গ্রহে সে বিনা শ্রমে পায় সব সুখ,
তাকেই দিচ্ছে সে তো যন্ত্রণা-দুখ!
তাকেই দুষণ ক’রে নানান ভাবে,
ভিন গ্রহে গিয়ে নাকি সুখটা পাবে!
যেখানে বাঁচার মতো নেই পরিবেশ,
সেখানেই চলে যাবে সব করে শেষ৷

এইসব শুনে, বলবে না কি হে ভাই,
পাগলদিগের সাথে আমি আর নাই৷
এখানেই এই অধ্যায় শেষ, মানছি, কিন্তু আমার মন থেকে সব কিছুর শেষে বেরিয়ে আসছে তপনকুমার মাইতির সংঙ্গীতটি ‘পৃথিবী ও পৃথিবী, নাওগো আমার প্রণাম৷’
কারণ, পৃথিবীকে প্রণাম দিয়েই আমাদের জীবন শুরু ও শেষ৷