এগারো

অবশেষে এল ১৫-ই জানুয়ারি ২০১৯, যে কথাটা এখানে বলে নিই, সেটা হল এটাই সেই অনুষ্ঠান যেটা হবার পর আমরা রাষ্ট্রসংঘতে আমাদের প্রপোজাল-রিকোয়েষ্ট পাঠাব৷ এদিকে অনুষ্ঠানটিকে আরো যত্নশীল ভাবে করতে হবে, কারণ, আগের অনুষ্ঠানগুলি থেকে আমি যেসব অভিজ্ঞতা নিয়েছিলাম সেগুলি উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে এগুতে হবে৷ এবার অনুষ্ঠানের কথায় আসি৷
আসলে অর্থনৈতিক সামর্থ্যয় ও যোগ্য সহকর্মীদের সহযোগিতা থাকলে যে কোনো অনুষ্ঠান ভালো হয়৷ কিন্তু আমার এ বিষয়টি এমন একটা ব্যাপার যেটা সবাই বুঝতে পারছে পর পর, কিন্তু অনেকেই মানসিকভাবে সেটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারছে না৷ পরপর হবে৷ কিন্তু একটু সময় যাবে৷ তাই আমি জানি এই অনুষ্ঠান যতটা নিখুঁত করতে চাই ততটা নিখুঁত হবে না এই সময়ে, কিন্তু পর পর মানুষ ভেতর থেকে বিষয়টার সাথে মিশে যাবে ও দক্ষ হবে এই বিষয়ে৷ আমারও অভিজ্ঞতা বাড়বে, বিষয় নিয়ে, অনুষ্ঠান নিয়ে৷
যাইহোক, এল সেই দিন, অবশেষে এল ১৫-ই জানুয়ারি ২০১৯, মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠান হবে, অকাতরে অর্থ খরচ করেছি৷
এদিকে একটা কথা বলি, আগেই বলেছি, আমন্ত্রণ করেছিলাম, কলকাতায় থাকা প্রায় ৩০টি কনস্যুলেটে৷ উপদেষ্টার কথা মতোই সেই কাজ করলাম৷ যে কোনো কারণেই হোক তাঁরা কোনো উত্তর দেন নি৷ না এতে কষ্ট পাইনি, কারণ এটাই হয়তো ঠিক, প্রথম এই বিষয়ের সাথে তাঁদের পরিচয় হচ্ছে, আরো হবে ।
এখন যে কথাটা বলে রাখি, আলিপুরে ‘উত্তীর্ণ’ নামের ওপেন এয়ার থিয়েটার’ এ হওয়ার কথা ছিল এই অনুষ্ঠান৷ সেই মত আমি সবাইকে আমন্ত্রণ করি৷ কিন্তু সরকারি নিয়ম মতো, সরকারের প্রয়োজনে যে-কোনো অনুষ্ঠানকে সরকার রাতারাতি বাতিল করতে পারে, আর তখন-ই বিপাকে পড়তে হয়৷ আমি অনুমোদন এর জন্য প্রার্থনা জানিয়ে দিলাম৷ দপ্তর মৌখিক ভাবে জানিয়ে ছিল, হয়ে যাবে৷ কিন্তু হঠাৎ বদলে গেল পরিস্থিতি৷ ওরা জানিয়ে দিল, হঠাৎ সরকারি কারণে ওই দিন ওখানে আমাদের অনুষ্ঠান হবে না৷ হাতে মাত্র একমাস বাকি৷ এর মধ্যে বের করতে হবে আমাকে অন্য জায়গা অনুষ্ঠানের জন্য৷
এদিকে কলকাতার মেয়র সাহেব ৪ঠা জানুয়ারি আমাকে পত্র দিলেন অনুমতি ও শুভেচ্ছা সহ এই বিষয়টিকে সমর্থন দিয়ে৷ এটা খুব খুশির খবর৷ কিন্তু সেটাতে ‘উত্তীর্ণ’ নামের ওপেন  এয়ার থিয়েটার এর ঠিকানা ছিল৷ সারা পৃথিবীতে চলে গেছে অনুষ্ঠানের স্থান ‘উত্তীর্ণ ওপেন এয়ার থিয়েটার’, আলিপুর, কলকাতা৷ কারণ দপ্তরের কোনো দোষ নেই এক্ষেত্রে, এটা একটা পরিস্থিতি মাত্র৷ কিন্তু সারা পৃথিবীতে যে আমন্ত্রণ চলে গেছে, সেখানে তা খুব অসুবিধা হবে৷ যদিও সেখানে আমি বলে রেখে ছিলাম, অনুষ্ঠানের স্থান বদলালে, জানিয়ে দেব৷ কিন্তু, এগুলি খুব ঝুঁকি, আমাদের মত নিঃস্ব হয়ে যুদ্ধ করা মানুষদের ক্ষেত্রে বিপদও বলা যেতে পারে৷ কিন্তু কী করব, পিছিয়ে আসার তো উপায় নেই৷
যদিও প্রায় তখনই আমাকে রাতারাতি ঠিক করতে হচ্ছে অন্য একটা জায়গা৷
পেয়ে গেলাম, মহাজাতি সদন৷ ভাগ্য ভালো, আগে থেকে ওখানে আমি একটা আবেদন পত্র দিয়ে রেখে ছিলাম৷ ওঁরা বলেছিলেন হবে৷ আর যখন আমি এই ভাবে বিপন্ন হলাম, মহাজাতি সদন দপ্তর আমাকে বিপদ থেকে রেহাই করে দিলেন৷
কলিকাতার এই হলটি ১৯১৩ তে সাহিত্যে নোবেল প্রাপক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উদ্ধোধন করেছিলেন ১৯৩৯ সালে৷ উনি একই সাথে ভারতের জাতীয় কবি৷ স্বাধীন বাংলাদেশের-ও আমাদের ‘জনগণমন’ আর বাংলাদেশের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ সংগীত দুটি এই দুটি দেশের জাতীয় স্তোত্র৷ রবিঠাকুর দেহ রাখেন ১৯৪১ সালে প্রায় ৮০ বছর বয়সে৷ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, ১৯৪৭ সালে আর বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে।
যাইহোক, সেখানে আমরা অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেলাম স্থান বদলের কারণে৷ সে জন্যও প্রচুর ঝামেলা৷
বলতে বলতে এসে গেল সেই দিন৷
মনে অনেক আনন্দ৷ কিন্তু ১২-৩০ থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ১-৩০ এর দিকেও কোনো ভি-আই-পি তেমন আসেননি৷
এরপর জনগণ পরপর আসছেন৷ কোনো কোনো বিশেষ আমন্ত্রিত ব্যক্তি আসেন৷ যেমন লেবানন থেকে একজন সিনেমার ডিরেক্টর ও একজন অভিনেতা৷ ওঁরাই ছিলেন অনুষ্ঠানের উদ্ধোধক৷ আমি গর্ব বোধ করেছিলাম৷ মানুষ খুব উৎসাহিত হয়েছিল৷ এর জন্য বহু ভাষায় পারদর্শী গায়িকা দীপা দাশের কাছে কৃতজ্ঞ৷ ওঁর মেয়ে শালিন-এর চেষ্টাও কম নয়৷ দীপাদির দুই মেয়ে এই নিয়ে খুব উৎসাহী ছিলেন৷ আমাকে যাঁরা নানা ভাবে এই রকম দিক থেকে সাহায্য করছে, তাঁদের মধ্যে দীপাদি ও অচেনাদির পুরো পরিবারও আছে৷
যাইহোক, এই ভাবেই চলল৷
আমরাই নাকি মহাজাতি সদনের ইতিহাসে প্রথম ড্রোন ব্যবহার করেছি৷ এই খবরটাও খুব রোমাঞ্চকর৷
এদিকে একটা মজার খবর হল, অনুষ্ঠান তখন শুরু হবে, আমি জানতাম না, পরে শুনলাম, বাইরে এসেছিলেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে দুজন প্রতিনিধি৷
তাঁদের সাথে প্রথম দেখা আমাদের সহ-যোদ্ধাদের একজন ঋদেনদিক মিত্রোর সাথে৷ ঋদেনদিকই তো ওয়ার্ল্ড এ্যানথেম ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ’ লিখেছেন। এই লেখকই আমাকে নিয়ে তখন একটি বত্রিশ পৃষ্ঠার হালকা ওজনের বই লিখেছেন, ঠিক আগের দিন পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন পেল যে বই৷ পৃষ্ঠায় হালকা ওজনের করেছেন, এই কারণে যে, যাতে অল্প দামে এটা হাজার হাজার মানুষের ভিতর ছড়িয়ে পড়ে৷ বইটি কলকাতার বুক বেঙ্গল পাবলিশার থেকে বেরিয়েছে৷ প্রকাশনার কর্ণধার সোমিন্দ্র কুমার৷
এদিকে ঋদেনদিক এর সাথে তখন ছিল আরেকজন, বনানী মন্ডল নামের বি-এ দ্বিতীয় বর্ষের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী৷ একই সাথে বনানী সংগীত চর্চাও করে৷ আসলে বিশেষ উপলব্ধির কেউ না হলে ঋদেনদিকের নিকট পরিচিত বা বন্ধু বলে কেউ গ্রাহ্য হতে পারে না৷ কারণ, চিন্তা ও উপলব্ধির সমতা ছাড়া সঠিক বন্ধুত্বের প্রথম স্তরটাই শুরু হয় না, এটা ঋদেনদিন-এর ধারণা, সেই মতো সে নতুন পরিচিত বনানীকে এনেছে এখানে৷ অনুষ্ঠানের আর এক আমন্ত্রিত দর্শক বনানী৷ আসলে আমিও এই বৃহৎ ভাবনার কর্মে কোনো ভুল প্রবেশ চাই না৷ এটা ঋদেনদিক জানেন৷ বনানীকে এনেছেন, এখানে, আমাদের এই চিন্তার সাথে পরিচিত করাতে৷ আমি ওনাকে সেই ভাবেই বলেছিলাম, কেউ তেমন পরিচিত থাকলে যে বা যারা অতিরিক্ত কোনো ভালো বিষয়কে নিতে আগ্রহ দেখাবে, তাদের জানিয়ে দিতে৷ সেই কারণে বনানী এসেছে৷ সেই মতো তিনি চেষ্টা করেছেন, এটাই আমার ভালো লাগলো৷ বনানী এই বিষয়ে খুব উৎসাহী ছিল।
পরে শুনলাম, পুলিশের দুজন লোক সাদা পোশাকে যখন এসেছিলেন এখানে কী অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটার সঠিকতা যাচাই করতে, তখন ওরা দুজন বিষয়টা বোঝালো৷ আর সেই প্রমাণে দুজনকে দুটো বই দিল৷ সব শুনে, ও বই দেখে ওঁরা আকাশ থেকে পড়লেন যেন৷ ওঁরা বললেন, ‘এ তো বিরাট চিন্তা, আমাদের মাথার বাইরে! না, মাইকেল তরুন বাবুকে আর ডিসটার্ব করতে যাব না, আসছি, ‘বলেই দুজন দুটো বই নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন, ঠিক তখন, ওরা দুজন জোর করে ওনাদের আনছে ভিতরে, আর ওঁরাও আসতে চাইছেন না৷ তবু ওঁরা একটু ভেতরে ঢুকে আমাদের বিশ্বশান্তির কর্ম কান্ডের কাজ দেখে অবাক হয়ে চলে গেলেন৷
না, তবু ওঁরা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হন নি, বরং ওঁরা অজান্তে আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে কোনো অন্যায় করেছেন, এমনি একটা অনুভূতি অব্যক্ত ভাবে প্রকাশ করে বিদায় নেন৷ যে-পুলিশ দপ্তরকে আমরা নানা সন্দেহের চোখে দেখি, তাঁদের আচরণ ওদেরও মুগ্ধ করল, আমি কাহিনিটা শুনে অবাক হলাম৷
আমরা পরে আলোচনা করলাম, মানুষ একটা পথ খুঁজছে, প্রকৃত শান্তির পথ৷ সেই ইচ্ছাটা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভিতর আছে৷
কারণ, পুলিশের লোক মানে সাধারণত অসৎ বলে লোকে জানে, কিন্তু তাঁরাও আমাদের কাজের ভাবনা দেখে  আনন্দে আত্মহারা হয়ে মাথায় টোকা দিতে দিতে থানাতেই ফিরে গেলেন খুব গর্ব নিয়ে যে, পৃথিবীতে তাহলে শান্তির সময় এই এসে গেল ব’লে!
এদিকে এইভাবেই চলল, ২০১৯ এর ১৫-ই জানুয়ারি । কয়েক দিন কেটে গেল, হঠাৎ হাতে পেলাম রাষ্ট্রসংঘ থেকে চিঠি৷
ওঁরা ১৬ জানুয়ারি, মানে এই অনুষ্ঠানের একদিন পর কিছু বিচার করে, পত্র লিখেছেন আমাদের ফাউন্ডেশনকে৷ আমাদের অনুষ্ঠান ভালো হয়েছে আশা করে, ও ওই পত্রে জানালেন যে, ওঁরা আমাদের প্রপোজাল রিকোয়েস্টটা অগ্রিম গ্রহণ করে রেখেছেন৷ ভেবে দেখবেন৷ কিন্তু পরের ধাপটিও ঠিক মতো পাঠাতে হবে৷
আমি এই খবর শেয়ার করলাম, এ্যাডভাইজার সহ অনেক সহকর্মী বন্ধুদের৷
আমরা আরো মনের জোর পেলাম, আমাদের স্বপ্নটা কোনো একদিন সফল হবে, এই আশায় বুক বেঁধে পরের কাজগুলি করার জন্য আরো সাহস ও আশা নিয়ে জেগে উঠলাম৷