পৃথিবী এখন এতটাই বিপন্ন যে, মানবজাতি ধ্বংসের মুখে, সকল জীব কুলের সুখ সংশয় তো খুব তরল কথা, বলা ভালো জীবন সংশয়৷ হাজার হাজার উদাহরণ আছে এই নিয়ে৷ যুদ্ধ ও মানুষের নানা রকম গোঁয়ারতুমিতে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আগ্রাসন, রেষারেষি, গোঁড়া জাতীয়তাবোধ, ধর্ম-জাতের ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে রেষারেষি, পরিবেশ দূষণ, আকাশে ওজন স্তর নষ্ট হচ্ছে, সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের পৃথিবীকে নানা ভাবে নষ্ট করছে৷ এদিকে প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশী ও সংসারে একে অপরের সাথে সম্পর্কগুলিও কৃত্রিম হয়ে এসেছে৷ সবাই সবার কাছে অবিশ্বাসী৷ এর ফলে কাছে দূরে সর্বত্র বিপন্নতা৷ একই সাথে প্রকৃতি জগতও বিপন্ন৷
এই তো সম্প্রতি আমাজন জ্বলে যাচ্ছে৷
একটা ছবি দেখলাম সংবাদ-মাধ্যমে৷ সবাই এটা দেখেছি৷ একটা বাঘ আমাজনের আগুনের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে, জলে ঝাঁপ দিল৷ একটি ব্রাজিলিয়ান সৈনিক ওই জলেই ছিল, প্রাণ বাঁচাতে৷ ছোট নদী৷ বুক অবধি জল৷
এবার বাঘটি ভেসে এলো সৈনিকের কাছে৷ সৈনিকটি ভাবলো, বাঘটি তাকে খেতে আসছে৷
কিন্তু তা হলো না৷ বাঘটি সৈনিকটিকে বন্ধু ভেবে জড়িয়ে ধরলো, সে বোঝালো যে এই বিপদে সে অসহায়৷ তাই সে বাঁচতে চায় মানুষটিকে বন্ধু ভেবেই৷ সৈনিকটিও সাথে সাথে সেটা বুঝে আবেগে আপ্লুত হয়ে বাঘটিকে জড়িয়ে ধরে ভাসিয়ে ভাসিয়ে চলতে থাকে নদীর জলে, চলতে থাকে বিপদমুক্ত স্থানের দিকে৷
এই ছবি আমাদেরকে অনেক কিছু ভাববার জন্য ভাবনার গভীরে প্রবেশ করায়৷ এদিকে আমরা পৃথিবীর চালচিত্র দেখে মানে দুষণ দেখে, মূলত পৃথিবীকে দূষিত করে দিয়ে অন্য গ্রহে পালাতে চাই৷ তার তোড়জোড় চলছে৷ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিপন্নতা!
ঠিক এই সময়ে আমাদের বিশ্বকে স্থায়ী ভাবে বিপদমুক্ত করতে এগিয়ে এলেন নামহীন এক সাধারণ যুবক৷ মাইকেল তরুন৷ ভারতীয় বংশোদ্ভুত নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বানিজ্যে সাম্মানিক স্নাতক হবার পর, Food and Beverage এর ওপর ডিপ্লোমা নিয়ে ১৯৯৪ সালে বিদেশে পাড়ি দেন চাকরির জন্য৷ ২০১৬ সাল অবধি ২৭টি দেশের কোনোটা ছুঁয়েছেন, কোনোটা ভালো করে দেখেছেন, এভাবে তিনি বিভিন্ন দেশের মাঝে নানা রকম অসহায়তা লক্ষ্য করেন৷ এগুলি তাঁর মনে জমা করে ছিল নানা রকম অনুভূতি৷ এদিকে একটা সময় তিনি ভারতে এসে কিছুদিন থেকে যাবার জন্য, অস্ট্রেলিয়ার চাকরিটা চলে যায়৷ ঐ সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ার বাসায় ব্যালকনিতে বসে দূরে তাকিয়ে দেখছিলেন ছলছল চোখ নিয়ে৷
হঠাৎ করে তিনি বসে বসেই এসময় আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি আনয়নের পদ্ধতি৷ এটাই পরবর্তী কালে ‘Theory of Permanent World Peace’---‘স্থায়ী বিশ্ব শান্তির সূত্র’ এবং সেই ভিত্তিতে পৃথিবীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘Earth and Art Revolution Day’ --- ‘পৃথিবী ও কলা বিপ্লব দিবস’ এর প্রবর্তন করেন বেসরকারি ভাবে প্রতি ১৫ই জানুয়ারি৷ যেটি সারা বিশ্বে সরকারি ভাবে প্রবর্তনের জন্য রাষ্ট্রসংঘে প্রার্থনা জানানো হয়েছে৷ এদিকে মাইকেল তরুন আজোবধি জমানো টাকা, সম্পত্তি বিক্রি সহ আরো নানা ভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করেছেন৷ ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত৷ তাঁর এই কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে তাঁর এই চিন্তা ও কর্ম পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনপত্র৷
পেয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের সমর্থনপত্র ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মহামান্য দলাই লামার আশীর্বাদ৷ শুভেচ্ছা পেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী দপ্তর ও কলকাতার মাননীয় মেয়র-এর থেকে৷ ২০১৯ ডিসেম্বর-এ এই গ্রন্থ প্রস্তুত করার দিন অবধি৷
একই সাথে অজস্র সংবাদ মাধ্যম আর কোটি কোটি জনগণের থেকে গভীর আস্থা৷
সেই ছেলেটি কী করে বদলে গেলো, মাতিয়ে দিলো সারা বিশ্ব, সেটাই এই গ্রন্থের বিষয়৷
তিনিই আবার তাঁর তৈরি ফাউন্ডেশন থেকে রাষ্ট্র সংঘকে উৎসর্গ করেছেন ওয়ার্ল্ড অ্যান্থেম বা বিশ্ব সংগীত ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ’, যেটি সারা বিশ্বে লাইভ দেখানো হয়েছে৷ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও দেখানো হয়েছে ও হচ্ছে৷ এছাড়াও আছে আরো অনেক রকম পরিকল্পনা৷
এই গ্রন্থের বিষয় মাইকেল তরুনের শৈশব থেকে এ অবধি কাহিনি ও জীবনবোধের ধারা৷ এই বিশ্বকে ভাবিয়ে তোলা এই মানুষটির কর্মপ্রকরণ নিয়ে, অনেক ইন্টারভিউ নিয়ে ও কাছে থেকে অনেক কিছু দেখে এই গ্রন্থটি অনুলেখন করলেন যিনি, তিনিও একজন বিশ্ব পরিচিত কবি-উপন্যাসিক- গীতিকার-কলামনিষ্ট৷ ইংরেজি ও বাংলাতে সমান ভাবে লেখেন, আলাদা বিষয়, অনুবাদ নয়৷ বিশ্ব জাতীয় সংগীত বা ওয়ার্ল্ড অ্যান্থেম ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ’ এই লেখকের লেখা৷ পেশায় লেখক৷ পেশায় সাংবাদিকতা থেকেই জীবন শুরু হয়েছিল৷ এঁর অনেক গ্রন্থের মধ্যে কয়েকটি গ্রন্থ এমন বিষয়ের ওপর লেখা বা আজোবধি পৃথিবীতে কেউ করেনি৷
যেমন রাষ্ট্রসংঘ থেকে নির্ধারিত প্রায় দেড়শতটি মোট আন্তর্জাতিক দিবস আছে, এই লেখক সব দিবসকে নিয়ে ইংরেজিতে গীতকবিতা লিখেছেন---‘Anthem-Poem on all The International Days.’ ও পৃথিবীর সব দেশের ওপর গীতকবিতা, ইংরেজীতে‘Anthem-Poem on All The Independent Nations’৷
আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত ‘বইয়ের দেশ’ এ যথাক্রমে জুলাই-সেপ্ঢেম্বর, ২০১৯, সংখ্যায় ১৪৩ (একশত তেতাল্লিশ) পৃষ্ঠায় ও অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যায় ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) পৃষ্ঠাতে এই বই দুটি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দান করা হয়েছে৷
এই লেখকও বহু প্রতিকুলতা পেরিয়ে আজ এই স্থানে৷ যাইহোক, তাঁর এ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে অনেকগুলি গ্রন্থের মধ্যে ২০১৯-এ জানুয়ারিতে বেরিয়েছে এই মাইকেলকে নিয়ে একটি বই‘A suprising Hero on the Earth, Michael Tarun.’৷
দ্রুত মানুষের ভিতর ছড়িয়ে দেবার জন্য এই বইটি স্বল্প পৃষ্ঠার কিন্তু এই বইটি নিয়ে আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা ‘বইয়ের দেশ’ লিখেছে, ‘‘নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মাইকেল তরুনের কর্মজীবন ও তাঁর আবিষ্কার ‘স্থায়ী বিশ্বশান্তির সূত্র’ এই লেখার মূল উপজীব্য৷ এর জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতার সমর্থন পেয়েছেন তরুন৷ গবেষণা ও তরুনকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতায় এ গ্রন্থটি রচিত’’৷ সংখ্যা : এপ্রিল-জুন, পৃষ্ঠা ১৪৭৷ আর একজনের কথা বলতেই হয়, একটি টিভি চ্যানেলের স্ক্রিপ্ট লেখক ও বিভাগীয় ডাইরেক্টর অরিজিত মণ্ডল ঋদেনদিক-কে প্রথমে উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করে ও পরে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে দিতেই ঋদেনদিক নিজের মতো কাজ করতে শুরু করে৷ এই কাজে অরিজিতের উপস্থিতি খুব সামান্য কিন্তু উনি ঋদেনদিক-কে প্রথম অবস্থায় গাইড না করলে, ঋদেনদিক ডানা খুলে উড়তে পারত না এক্ষেত্রে৷ পরে উনিই ঋদেনদিকের কাজে চমকে যান৷
এখন আবার নিয়মিত নানা পত্রপত্রিকায় বেরুচ্ছে, মানবজাতী আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে চলেছে কী ভাবে৷ সকলেই তা দেখছেন সোস্যাল মিডিয়াতে, মুদ্রিত পত্রপত্রিকাগুলিতে৷ সারা পৃথিবী আজ আতঙ্কে দিশাহারা৷ মহান মানুষদের ও দায়িত্বশীল জনগণ-এর কঠিন প্রচেষ্টাগুলি কীভাবে তচ্নচ্ হয়ে যাচ্ছে৷ এক-ই ভাবে মাইকেল তরুনের প্রস্তাবিত চিন্তা ও কাজের সামনে বাধা আসছে৷ তার মধ্য দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সবাই সবাইকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে৷ আসলে পৃথিবী নিয়ে সকলেই আজ ভাবছি, যে যার মত করে৷ এটা তো মানতেই হবে৷
আর বলতেই হয়, গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিভাস বৈদ্য-এর কথা৷ এই সুন্দর প্রচ্ছদ-এর জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানাই৷ আর একটা কথা, এই ধরনের অনুলিখন রীতি সর্বজন স্বীকৃত৷ তাই এনিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে না৷ বইয়ের ভিতরে বিমানবন্দরের ছবিটা এঁকেছেন শিল্পী ফার্নান্ডো রডরিক ওরফে অভিজিত৷ পরিকল্পনা ঋদেনদিকের৷ একই সাথে শিক্ষক ও গ্রন্থপ্রেমিক উত্তম কুমার মাইতিকে ধন্যবাদ৷ তিনি মাইকেল তরুনের এই সাহসী কর্মকে উৎসাহিত করেছেন বারবার৷
আমি বিশ্বাস করি, সারা পৃথিবীতে এই গ্রন্থটি শুধু সাহিত্য গুণেই সমাদৃত হবে তাই নয়, উল্লেখযোগ্য ভাবনার গুণেও শিশু থেকে বড়, সবাইকে চমকিত করবে এবং বিশ্বশান্তির পথকে সমৃদ্ধ করবে৷
সোমিন্দ্র কুমার
বুক বেঙ্গল পাবলিশার, কলকাতা