প্রকাশকের কলমে —

আমাদের পৃথিবীর দুটোই নিয়ম — সাম্য আর সহবস্থান। তাই সবার জন্য সবাই। একা বাঁচতে গেলে মরতে হবে। আবার কাউকে মারতে গেলে বাঁচা হবে না। সবাই বাঁচলে সবার রক্ষে।
কিন্তু আমাদের, মানে মানুষের বায়ানাক্কা একটু বেশি। একটা মানুষের জীবনধারণের জন্য অর্থাৎ মাথা গোঁজা আর রোজের কাজের জন্য গড়পড়তায় যেটুকু জমি চাই তাতে গোটা দশেক বটগাছ অনায়াসে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা মানে মানুষেরা জীবনকে মসৃণ করতে গিয়ে প্রকৃতি থেকে ক্রমশঃ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। অথচ আমরাও তো প্রকৃতির অংশ বিশেষ। যেমন, এয়ারকন্ডিশনিং করে গরমে ঠান্ডা, ঠান্ডায় গরম চাই। ঘাসের বদলে সিমেন্ট-পিচ বাঁধানো রাস্তায় আমাদের বিচরণে আনন্দ। প্রকৃতিজাত টাটকা ফল-সব্জির চাইতে ‘প্রসেস ফুডে’ আমাদের জিভে জল আসে। ওপর ওপর দেখলে ব্যাপারগুলো হয়তো ঠিক আছে মনে হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনও আছে। তবু একটু ভাবলে কেমন যেন মনে হয় এসবই আমাদের প্রকৃতি বিচ্ছিন্নতার নামমাত্র কিছু বিক্ষিপ্ত উদাহরণ।
জীব জড় নিয়েই কিন্তু প্রকৃতি। পরিবেশের এই সাম্যাবস্থায় অসাম্য ঘটার কারণগুলির অন্যতম  হল দূষণ। আর এই দূষণের সৃষ্টি কর্তা হল তথাকথিত বুদ্ধিমান জীব মানুষ।
এই পৃথিবীকে আমরা স্বর্গ বানাব না নরক সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। দূষণ আমাদের রোধ করতেই হবে। দূষণ এমনই শৃঙ্খলাহীন যা দেশগন্ডী মানে না। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ ক্ষতি করবে প্রতিবেশিকেও। সে শহর হোক, রাজ্য হোক বা সমগ্র রাষ্ট্র, যাই হোক না কেন।
পৃথিবীকে দূষণমুক্ত, সুস্থ্য সবল রাখতে আমাদের  অর্থাৎ মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ পৃথিবীর সমগ্র জীবকুলের মধ্যে মানুষই শ্রেষ্ঠ এবং বুদ্ধিমান। আর সেইজন্য ক্ষতির আশঙ্কাটাও তার দিক থেকেই বেশি।
মাইকেল তরুণ স্ট্যাচু অফ্ মাদার আর্থ নির্মাণ করার একটি মহৎ প্রচেষ্টায় ব্রতী হয়েছেন। পৃথিবীতে প্রথম ও শেষ আশ্চর্য নামে পরিচিত হবে, এই সৌধটি পৃথিবীকে ভালবাসা ও রক্ষা করার বার্তা বহন করবে। পৃথিবীতে অনেক স্মৃতি ও সৌধ রয়েছে যা কোন দেশের বা মানুষের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু পৃথিবীকে পাওয়ার আনন্দে বা মহানুভবতায় কোন স্মৃতি বা সৌধ নির্মাণ আজ পর্যন্ত কেউ কখনও কোথাও করেছে বলে শোনা যায়নি, যা সমগ্র মানবজাতির কাছে লজ্জাজনক। এই মহৎ প্রচেষ্টায় আসুন আমরা সবাই সামিল হই।       
যাই হোক, সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে তার নিজের সাধ্য অনুযায়ী প্রকৃতি অর্থাৎ পৃথিবীর হিতার্থে সামান্য পরিমাণ অংশগ্রহণ এবং সদর্থক চিন্তাভাবনা সামগ্রিকভাবে ধরিত্রী তথা মনুষ্যজাতির কল্যাণ হওয়া অসম্ভব বা অবাস্তব কিছু ব্যাপার নয়।
আলোচ্য বইটিতে মাইকেল তরুণ তাঁর ভাবনার মাধ্যমে সেই ধরিত্রীকে ভালোবাসার কথাই ব্যক্ত করেছেন, সৃষ্ট চরিত্র মহীধর সেনের চরিত্রায়নের মাধ্যমে। আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অস্বাভাবিক, ক্ষেপাটে মনে হলেও যতই চরিত্রটির গভীরে যাওয়া যাবে ততই তার পৃথিবীকে ভালোবাসার, পৃথিবীর জন্য চিন্তা ভাবনা করার প্রতি পাঠকের সহমর্মিতা জাগতে বাধ্য।
ধন্যবাদ জানাই এই ‘মাইকেল তরুণ‘ নামধারী মাইকেলকে তাঁর চিন্তাশৈলী এভাবে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এ ধরণের একটি বইয়ের প্রকাশনার শরিক হয়ে প্রকাশক  হিসাবেও নিজেকে গর্বিতবোধ করছি। সেই সঙ্গে আশা করছি বর্তমান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই বই থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজ উপকৃত হবে। সেইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাই বইটি প্রকাশের সঙ্গে সংযুক্ত সকল কলাকুশলীদের অর্থাৎ চিত্র অলংঙ্করন, প্রচ্ছদ শিল্পী, মুদ্রাকর, বাঁধাই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলকেই।
কৃতজ্ঞতা জানাই সহলেখক দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়কে, শুধুমাত্র সহলেখক হিসেবেই নয় সহযোদ্ধা হিসেবে লেখকের পাশে থাকার জন্য।

সুকুমার গুপ্ত

নলেজ ব্যাঙ্ক পাবলিশার্স এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটার্স

সেপ্টেম্বর, ২০২০                                
কলকাতা